স্লিপ এপনিয়া একটি গুরুতর ঘুমের সমস্যা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেক্রে দেখা যায় যে, তাদের ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হওয়া, এমনি কি পুনরায় এটি আবার চালু হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে।
এখানে আশার কথা হলো, স্লিপ এপনিয়া রোগে ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি (প্রাকৃতিক উপায়ে) অনুসরণ করে, এই সমস্যা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে, এটি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য উন্নতিতে সহায়ক হয়ে থাকে।
স্লিপ এপনিয়া কী এবং এর লক্ষণসমূহ –
স্লিপ এপনিয়া ঘুমের এক ধরনের সমস্যা। এই সমস্যায় ঘুমের ভেতর বারবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর আবার চালু হয়। এতে নিঃশ্বাস নেওয়ার রাস্তা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বলে মস্তিষ্কে ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না। এরফলে ভালো করে ঘুম হয় না এবং বারবার ঘুম ভেঙে যায়।
রাতে ও দিনের বেলা স্লিপ এপনিয়ার কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার স্লিপ এপনিয়া হয়েছে কি না, সেগুলি হলোঃ
রাতের বেলা এই সমস্যা হলে কিছু বিষয় খেয়াল করা যায়। যেমন –
- বিশেষ করে অনেক জোরে নাক ডাকা,
- ঘুমের মধ্যে দম আটকে গিয়ে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া,
- ঘুম থেকে ওঠার পর মুখ ও গলা শুকনা লাগা এবং
- ঘুমের মধ্যে খুব বেশি নড়াচড়া করা বা ছটফট করা, ইত্যাদি।
এর কারণে দিনের বেলাতেও নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন –
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা করা ও শরীর দুর্বল লাগা,
- সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থাকা এবং
- কোনো কিছুতে মন বসাতে না পারা,
- অকারণে মেজাজ খারাপ হওয়া বা অল্পতেই রেগে যাওয়া এবং
- প্রতিদিনের কাজকর্মে ভুল হওয়া বা কাজের গতি কমে যাওয়া।
স্লিপ এপনিয়া ঘরোয়া চিকিৎসা ও মুক্তির ৭টি উপায়ঃ
সিপিএপি মেশিনের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া চিকিৎসাপদ্ধতি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন স্লিপ এপনিয়ার ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে কিছু সহায়ক ঘরোয়া পদ্ধতি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন এর মাধ্যমে স্লিপ এপনিয়া থেকে মুক্তির উপায় আলোচনা করা হলোঃ
১) অতিরিক্ত ওজন কমানো
অতিরিক্ত ওজন কমানো স্লিপ এপনিয়া রোগের ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। কারণ, শরীরের বাড়তি ওজন, বিশেষ করে গলার চারপাশের চর্বি শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে ফেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের মোট ওজনের মাত্র ১০ শতাংশ কমালেও এই রোগের লক্ষণগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।
এছাড়া ধূমপান ও মদ্যপানের মত খারাপ অভ্যাস গুলো শ্বাসনালীর পেশীগুলোকে শিথিল করে দেয়, যা স্লিপ এপনিয়ার সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। তাই এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা জরুরি।
২) ঘুমের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা:
পাশাপাশি, ঘুমের অভ্যাসের পরিবর্তনও বেশ কার্যকরী।
যেমন, চিৎ হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করলে জিহ্বা এবং নরম তালু শ্বাসনালীর পথকে সহজে বন্ধ করতে পারে না।
মাথার নিচে উঁচু বালিশ ব্যবহার করে মাথা ও গলা শরীর থেকে সামান্য উঁচুতে রাখলেও শ্বাসনালী খোলা থাকতে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে গলা এবং জিহ্বার কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম, শ্বাসনালীর পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে, যা ঘুমের সময় শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
৩) ওরাল অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করুন
ওরাল অ্যাপ্লায়েন্স বা মুখে ব্যবহারের ডিভাইস ঘুমের সময় শ্বাসনালী খোলা রাখতে সহায়তা করে। এটি মূলত জব বা জিহ্বার অবস্থান সামান্য সামনে এনে গলার পেছনের বাঁধা কমিয়ে দেয়।
এই ডিভাইস দুই প্রকারের হয়ে থাকে:
ম্যান্ডিবুলার অ্যাডভান্সমেন্ট ডিভাইস (Mandibular Advancement Devices) — নিচের চোয়াল সামনের দিকে সরিয়ে দেয়।
টাং স্ট্যাবিলাইজিং ডিভাইস (Tongue Stabilizing Devices) — জিহ্বা সামনের দিকে রাখে যাতে তা শ্বাসনালী বন্ধ না করে।
এগুলো সাধারণত দুইভাবে পাওয়া যায়:
ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) বা ফার্মেসিতে কম খরচে কিনতে পাওয়া যায়।
কিংবা দাঁতের ডাক্তারের সাহায্যে কাস্টম ফিট করা যায়।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ডেন্টাল স্লিপ মেডিসিন এই ধরণের ডিভাইসকে স্লিপ এপনিয়ার জন্য কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে সমর্থন করেছে।
৪) শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং গলার ব্যায়াম –
ব্যায়ামের মাধ্যমে উপকার: নিয়মিত ব্যায়াম স্লিপ এপনিয়ার উপসর্গ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। রোজ ব্যায়াম করলে স্লিপ এপনিয়ার সমস্যা কমাতে খুব উপকার হয়। বিশেষ করে, গলা আর জিভের কিছু ব্যায়াম মাংসপেশিকে শক্ত করে এবং নিঃশ্বাসের রাস্তা খোলা রাখতে সাহায্য করে।
একটি গবেষণা (International Journal of Health & Allied Sciences, ২০২১) অনুযায়ী, যোগব্যায়াম শ্বাসনালির ওপরের পেশিগুলোর দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা OSA (Obstructive Sleep Apnea) হ্রাসে ভূমিকা রাখে।
প্রাণায়ামের উপকারিতাঃ
- ফুসফুসের পেশি ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়
- শ্বাস-প্রশ্বাস গভীর ও নিয়মিত করে
- শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করে
বিশেষ করে অনুলোম-বিলোম ও কপালভাতি-র মতো ব্যায়ামগুলো শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ঘুমের সময় এয়ারওয়ে খোলা রাখতে সাহায্য করে।
কীভাবে ব্যায়াম করবেন?
কিছু সহজ ব্যায়াম নিয়মিত করতে পারেন। যেমন, জিভ মুখের বাইরে বের করে দশ সেকেন্ড ধরে রাখা, গলার মাংসপেশিতে হালকা চাপ দিয়ে ‘আহ্’ এর মতো শব্দ করা এবং নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়া। এই ব্যায়ামগুলো প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট ধরে করলে উপকার পাওয়া যায়।
৫) জীবনযাপনের অভ্যাস বদলানো –
এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনযাপনের কিছু অভ্যাস বদলানো খুব জরুরি।
ধূমপান ও মদপান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া দরকার, কারণ এইগুলো গলার মাংসপেশিকে আরও ঢিলা করে দেয় এবং ভেতরের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুটা হাঁটাচলা বা শরীরচর্চা করুন। শরীরকে সতেজ রাখতে এবং শুকিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে বেশি করে পানি পান করাও খুব জরুরি।
৬) খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত পরামর্শ:
সন্ধ্যার পর গুরুপাক বা ভারী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি) ও অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করুন।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রাখুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি পানীয় যথাসম্ভব পরিহার করুন।
যদিও ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে, গুরুতর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এগুলোর ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিপিএপি মেশিনের ব্যবহারই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমাধান। সমন্বিত পদ্ধতিতে, অর্থাৎ সিপিএপি থেরাপির সাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখলে স্লিপ এপনিয়ার সমস্যা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
৭) ঘুমের পরিবেশ উন্নতি এবং স্লিপ হাইজিন –
৮) প্রাকৃতিক প্রতিকার এবং হার্বাল সমাধান –
কিছু ভেষজ বা গাছগাছড়ার ব্যবহার স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে। তবে, যেকোনো ভেষজ জিনিস ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত, কারণ সবার শরীরে সবকিছু একভাবে কাজ করে না।
ক) কিছু উপকারী ভেষজ উপাদান:
যেমন, হলুদ শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমায় ও নিঃশ্বাসের রাস্তাকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
আদা গলার অস্বস্তি কমায় এবং শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। আদা ও মধু চা গলা খোলা রাখতে সাহায্য করে।
তুলসী ও লবঙ্গের মিশ্রণ: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে।
এছাড়া, ল্যাভেন্ডার তেলের ঘ্রাণ মনে শান্তি এনে ঘুম আনতে সাহায্য করে এবং ক্যামোমাইল চা মাংসপেশিকে শিথিল করে ও মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমায়।
ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium): এই খনিজ পেশি শিথিল করে এবং স্নায়ুকে শান্ত করে, ফলে ঘুমের মান উন্নত হয়।
মেলাটোনিন (Melatonin) এটি শরীরের ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণকারী প্রাকৃতিক হরমোন। সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করলে ঘুম গভীর হতে সাহায্য করে।
খ) নাক পরিষ্কার রাখার পদ্ধতি:
ঘুমের সময় যদি নাক বন্ধ থাকে তাহলে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হয়, যার ফলে স্লিপ এপনিয়ার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। একারণে, ঘুমের আগে নাক সব সময় পরিষ্কার রাখাটা খুবই জরুরি।
নাক পরিষ্কার রাখার জন্য নেতি পট দিয়ে নাক ধোয়ার অভ্যাস করতে পারেন। গরম পানির ভাপ নিলে বন্ধ নাক সহজে খুলে যায়।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নাকের ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, আপনার যদি কোনো কিছুতে অ্যালার্জি থাকে, তবে সেই কারণগুলো খুঁজে বের করে তা এড়িয়ে চলা উচিত।
৯) স্লিপ এপনিয়া থেকে মুক্তি পেতে সিপিএপি মেশিনের ব্যবহার:
এই অবস্থার চিকিৎসা হিসেবে সিপিএপি (CPAP) বা কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার মেশিন একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর পদ্ধতি। এর পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া নিয়মকানুন মেনে চললে এই সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
সিপিএপি (CPAP) মেশিনের কার্যকারিতা –
সিপিএপি মেশিন ঘুমের সময় নাকে বা মুখে লাগানো একটি মাস্কের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে মৃদু ও অবিরাম বায়ুচাপ সৃষ্টি করে। এই বায়ুচাপের ফলে রোগীর শ্বাসনালী খোলা থাকে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে। ফলে, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না এবং রোগী নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘুমাতে পারে।
এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ার সবচেয়ে প্রচলিত এবং নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা হিসেবে গণ্য হয়। এই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, মনোযোগের অভাব এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাগুলো কমে আসে।
ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়ার কারণসমূহ –
বিভিন্ন কারণে ঘুমের মধ্যে শ্বাস বা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু কারণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের গঠন সম্পর্কিত, আর কিছু আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন বা অভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে।
ক) ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়ার শারীরিক কারণঃ
শরীরের ওজন খুব বেশি হওয়াঃ শরীরের ওজন খুব বেশি হলে তা নিঃশ্বাস নেওয়ার রাস্তায় চাপ দেয়। ফলে ঘুমের মদ্ধে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নেয়া সম্ভব হয়না।
গলার মাংসপেশি দুর্বল হওয়াঃ এছাড়া, অনেকের গলার মাংসপেশি দুর্বল থাকে, অথবা ঘুমের সময় বেশি ঢিলেঢালা হয়ে যায়।
জিহ্বার আকার ও টনসিল থাকলেঃ জিহ্বার আকার বড় হলে অথবা টনসিল ফুলে গেলেও এধরনের স্লিপ এপনিয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নাকের হাড় বাঁকা থাকাঃ নাকের হাড় বাঁকা থাকলেও নিঃশ্বাস নেওয়ার পথ সরু হয়েও এই সমস্যা হতে পারে।
খ) জীবনযাপন ও অন্যান্য অভ্যাস জনিত কারন –
যারা ধূমপান বা মদ্যপান করেন, তাদের এই ধরনের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেলেও এমন হতে পারে।
আবার, চিৎ হয়ে শোয়ার অভ্যাস যাদের থাকে এবং
যাদের প্রতিদিন ঘুমের সময় ঠিক থাকে না তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
কখন একজন চিকিৎসকের সাহায্য নেবেন –
স্লিপ এপনিয়া ঘরোয়া চিকিৎসা কার্যকর হলেও কিছু ক্ষেত্রে পেশাদার চিকিৎসা প্রয়োজন। গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঘরে বসে চিকিৎসা করে উপকার পাওয়া গেলেও, কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়াটা খুব জরুরি। যদি সমস্যা বেড়ে যায় বা কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
কখন অবশ্যই ডাক্তার দেখানো দরকারঃ
দিনের বেলায় যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়ার কারণে যদি আপনার কাজের ক্ষতি হয়, আপনার যদি আগে থেকেই হার্টের সমস্যা বা হাই ব্লাড প্রেসার থাকে, অথবা ঘরোয়া চিকিৎসায় কোনো লাভ না হয়, তাহলে ডাক্তার দেখানো জরুরি। পরিবারের লোকেরা আপনার নাক ডাকা নিয়ে বারবার অভিযোগ করলেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
মনে রাখবেন, স্লিপ এপনিয়ার জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা বেশ নিরাপদ এবং এতে সহজেই উপকৃত হওয়া যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে জরুরি ধাপ। ঠিকভাবে ঘুমানো, ঘুমের ভালো পরিবেশ তৈরি করা, রোজ ব্যায়াম করা এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ধূমপান ও মদপান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া দরকার। তবে, সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী –
প্রশ্ন ১) ঘরোয়া চিকিৎসায় স্লিপ এপনিয়া কমানো যায় কিনা?
উত্তরঃ হ্যাঁ, হালকা থেকে মাঝারি স্লিপ এপনিয়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে কার্যকরভাবে কমানো সম্ভব। ওজন কমানো, ঘুমের অবস্থান পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার উন্নতি করে উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ২) স্লিপ এপনিয়া হলে কী করা উচিত?
উত্তরঃ প্রথমে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করুন, ওজন কমান এবং ধূমপান ত্যাগ করুন। পাশ ফিরে ঘুমান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। উন্নতি না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রশ্ন ৩) কতদিনে ঘরোয়া চিকিৎসার ফলাফল পাওয়া যায়?
উত্তরঃ সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক উন্নতি দেখা যায়। তবে সম্পূর্ণ ফলাফল পেতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে। ধৈর্য রেখে নিয়মিত অনুশীলন করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৪) কোন খাবার স্লিপ এপনিয়া বাড়ায়?
উত্তরঃ ভারী খাবার, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার স্লিপ এপনিয়া বাড়ায়। সন্ধ্যার পর এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রশ্ন ৫) ব্যায়াম কীভাবে স্লিপ এপনিয়া কমায়?
উত্তরঃ নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমায়, পেশী শক্তিশালী করে এবং শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গলা ও জিহ্বার ব্যায়াম শ্বাসনালী খোলা রাখতে বিশেষভাবে সহায়ক।
শেষ কথাঃ
স্লিপ এপনিয়া একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা এবং সঠিক ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ধৈর্য এবং নিয়মানুবর্তিতার সাথে এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করুন। মনে রাখবেন, ছোট ছোট পরিবর্তন বড় ফলাফল আনতে পারে। আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য আজই এই স্লিপ এপনিয়া ঘরোয়া চিকিৎসা (প্রাকৃতিক) পদ্ধতি শুরু করুন।
✅ বিঃদ্রঃ: এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি। নিজের শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। স্বাস্থ্য সমস্যায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।