আপনি যদি রাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট পান বা হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এটি স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণ হতে পারে। স্লিপ এপনিয়া একটি গুরুতর ঘুমের ব্যাধি যা বাংলাদেশে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্লিপ এপনিয়া কেন হয় এবং এই সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
স্লিপ এপনিয়ার কারণে আপনার ঘুমের গুণমান নষ্ট হয় এবং দিনের বেলা ক্লান্তি অনুভব করেন। এই রোগের সঠিক চিকিৎসা না করলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই স্লিপ এপনিয়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্লিপ এপনিয়ার প্রধান লক্ষণসমূহ –
স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণগুলো চিনতে পারলে আপনি সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারবেন। এই লক্ষণগুলো রাতে এবং দিনে উভয় সময়ই প্রকাশ পায়। অনেক সময় রোগী নিজে বুঝতে পারেন না কিন্তু পরিবারের সদস্যরা লক্ষ্য করেন।
ক) রাতের বেলার লক্ষণ:
ঘুমের মধ্যে জোরে নাক ডাকা স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণ সবচেয়ে সাধারণ বিষয়। এই নাক ডাকা সাধারণ নাক ডাকার চেয়ে অনেক জোরে হয়। হঠাৎ করে নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শ্বাস বন্ধ হওয়ার পর আবার জোরে শ্বাস নেওয়া।
ঘুমের মধ্যে হাঁপিয়ে ওঠা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করা। ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করা এবং ঘাম হওয়া।
Read: রাতে শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায়: করণীয় ও প্রতিকার
খ) দিনের বেলার লক্ষণ:
সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা অনুভব করা স্লিপ এপনিয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমালেও দিনের বেলা অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং তন্দ্রা অনুভব করা। কাজে মনোযোগ দিতে না পারা এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং বিরক্তি অনুভব করা। গাড়ি চালানোর সময় বা কাজের মধ্যে ঘুম পাওয়া। দিনের বেলা হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেওয়া।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ:
সকালে মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং গলা ব্যথা অনুভব করা। রাতে ঘুমের মধ্যে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। উচ্চ রক্তচাপ এবং যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
স্লিপ এপনিয়া কি এবং কত প্রকার –
স্লিপ এপনিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘুমের সময় আপনার শ্বাস কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই শ্বাস বন্ধ হওয়ার ঘটনা রাতে কয়েকবার থেকে শুরু করে শতবারও ঘটতে পারে। প্রতিবার শ্বাস বন্ধ হওয়ার সময় আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্লিপ অ্যাপনিয়া মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে:
১. অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (Obstructive Sleep Apnea – OSA)
২. সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (Central Sleep Apnea – CSA)
৩. কমপ্লেক্স বা মিক্সড স্লিপ অ্যাপনিয়া (Complex/Mixed Sleep Apnea)
স্লিপ এপনিয়া কেন হয় এবং এর মূল কারণসমূহ –
স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণ এবং এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা আপনার জানা প্রয়োজন। এই কারণগুলো বুঝলে আপনি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। স্লিপ এপনিয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য এই কারণগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
১. অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা:
স্লিপ অ্যাপনিয়ার সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন। শরীরের ওজন বাড়লে, বিশেষ করে গলার চারপাশে চর্বি বা মেদ জমতে শুরু করে। এই অতিরিক্ত মেদ শ্বাসনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাকে সরু করে ফেলে। ঘুমের সময় যখন গলার মাংসপেশী শিথিল হয়, তখন এই সরু শ্বাসনালী সহজেই বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার সৃষ্টি করে, যা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মূল কারণ।
২. শারীরিক ও গঠনগত বৈশিষ্ট্য:
অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির শারীরিক গঠনই স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
গলার গঠন: জন্মগতভাবে শ্বাসনালী সরু হওয়া।
বড় আকারের টনসিল বা অ্যাডেনয়েড: বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রধান কারণ।
মোটা বা বড় জিহ্বা: যা ঘুমের সময় পেছনের দিকে গিয়ে শ্বাসনালীকে আটকে দিতে পারে।
ছোট চোয়াল বা পেছনের দিকে থাকা চোয়াল (Retrognathia): এটি গলার ভেতরের পরিসর কমিয়ে দেয়।
নাকের সমস্যা: নাকের হাড় বাঁকা (Deviated Septum) বা অ্যালার্জির কারণে নাকে প্রতিবন্ধকতা থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়, যা স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
অন্যান্য শারীরিক অবস্থা:
কিছু নির্দিষ্ট রোগ বা শারীরিক অবস্থা স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থাগুলো শরীরবৃত্তীয় নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্বাসনালীর গঠন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। যেমন:
ক) হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি) –
হাইপোথাইরয়েডিজম হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করতে পারে না। এই হরমোন শরীরের বিপাক ক্রিয়া (metabolism) নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য। এর ঘাটতি হলে শরীরের সার্বিক কার্যক্ষমতা কমে যায়, যা বিভিন্নভাবে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়:
বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যাওয়ায় সহজে ওজন বাড়ে এবং গলায় চর্বি জমে শ্বাসনালী সরু করে ফেলে। কিছু ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে জিহ্বা আকারে বড় হয়ে যায়, যা ঘুমের মধ্যে শ্বাসনালীকে আটকে দিতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী পেশীগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
খ) পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) –
PCOS মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা। এই অবস্থায় মহিলাদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হতে পারে। PCOS এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে:
PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের মধ্যে স্থূলতা এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের প্রবণতা খুব বেশি, যা স্লিপ অ্যাপনিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের উচ্চ মাত্রা শরীরের উপরিভাগে চর্বি জমাতে সাহায্য করে, যা শ্বাসনালীর ওপর চাপ বাড়ায়।
গ) হৃদরোগ বা হার্ট ফেইলিওর –
হার্ট ফেইলিওর বা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যাওয়া বলতে বোঝায় যখন হৃদপিণ্ড পুরো শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না। এই অবস্থাটি সেন্ট্রাল এবং অবস্ট্রাকটিভ উভয় প্রকার স্লিপ অ্যাপনিয়ার সাথেই সম্পর্কিত: হার্ট ফেইলিওরের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যেতে পারে, ফলে মস্তিষ্ক শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশীগুলোকে সঠিকভাবে সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয়।
হৃদপিণ্ড ঠিকমতো পাম্প না করতে পারলে শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে ফুসফুস ও গলায় পানি বা ফ্লুইড জমতে পারে। এই জমে থাকা ফ্লুইড ঘুমের সময় শ্বাসনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে একে সরু করে দেয়।
ঘ) স্ট্রোকের ইতিহাস –
স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে বা কমে গিয়ে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা। স্ট্রোক এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া দ্বিমুখী ঝুঁকিতে আবদ্ধ: স্ট্রোকের ফলে যদি মস্তিষ্কের সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে (ব্রেইনস্টেম), তবে সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে, আগে থেকেই স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে তা উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
ঙ) টাইপ-২ ডায়াবেটিস –
টাইপ-২ ডায়াবেটিস এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স) অথবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রায়শই একসাথে দেখা যায়: অতিরিক্ত ওজন টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া উভয়েরই প্রধান ঝুঁকি।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে শরীরের মানসিক চাপ (stress) বাড়ে, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে। ফলে ডায়াবেটিস এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া একে অপরের অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।
৩. বয়স ও লিঙ্গ:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর মাংসপেশীর স্বাভাবিক শিথিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ঝুঁকি বাড়ে। পুরুষদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রবণতা মহিলাদের তুলনায় প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি। তবে, মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর মহিলাদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
৪. পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক্স:
পরিবারের কারো, যেমন বাবা-মা বা ভাই-বোনের স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে অন্যদেরও হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর কারণ হলো, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শারীরিক গঠনের (যেমন—চোয়াল বা গলার গঠন) মিল থাকে, যা জিনগতভাবে বাহিত হয়।
৫. জীবনযাত্রাগত অভ্যাস:
কিছু বদভ্যাস স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেয়:
ধূমপান: ধূমপানের ফলে শ্বাসনালীতে প্রদাহ হয় এবং तरल पदार्थ জমে, যা একে সরু করে ফেলে।
অ্যালকোহল সেবন: অ্যালকোহল বা মদ্যপান গলার পেছনের মাংসপেশীগুলোকে শিথিল করে দেয়, ফলে ঘুমের মধ্যে শ্বাসনালী বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ঘুমের ওষুধ বা সিডেটিভ: এই ধরনের ওষুধ মাংসপেশীকে শিথিল করে, যা অ্যালকোহলের মতোই স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
চিত হয়ে শোয়া: চিত হয়ে ঘুমালে জিহ্বা এবং নরম তালু গলার পেছনের দিকে চলে গিয়ে শ্বাসনালীকে আংশিকভাবে বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে।
এই কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন থেকে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রেখে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
স্লিপ এপনিয়ার ঝুঁকি ও জটিলতা –
স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণ গুলো চিকিৎসা না করালে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এই রোগ শুধু ঘুমের সমস্যা নয়, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো জীবনের মান এবং আয়ু কমিয়ে দেয়।
ক) হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ:
স্লিপ এপনিয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি তিনগুণ বেড়ে যায়। রাতে অক্সিজেনের অভাবে হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপ স্লিপ এপনিয়ার একটি সাধারণ জটিলতা।
খ) ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিন্ড্রোম:
স্লিপ এপনিয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বেড়ে যায়। মেটাবলিক সিন্ড্রোম এবং ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
গ) মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব:
দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের অভাবে বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের সমস্যা দেখা দেয়। মেজাজের পরিবর্তন এবং রাগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্রে এবং পারিবারিক জীবনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন –
স্লিপ এপনিয়া কেন হয় এবং এর কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে যদি আপনার পরিবারের সদস্যরা আপনার ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হওয়ার কথা জানান। দেরি করলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
জরুরি লক্ষণসমূহ:
জোরে নাক ডাকা এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া। দিনের বেলা অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং ঘুম পাওয়া। গাড়ি চালানোর সময় বা গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া। সকালে মাথা ব্যথা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
স্লিপ স্টাডি পরীক্ষা:
চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী স্লিপ স্টাডি পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন। এই পরীক্ষা হাসপাতালে বা বাড়িতে করা যেতে পারে। পরীক্ষার মাধ্যমে স্লিপ এপনিয়ার তীব্রতা নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী –
স্লিপ এপনিয়া কি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য?
হ্যাঁ, সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে স্লিপ এপনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সম্পূর্ণ নিরাময় নির্ভর করে কারণ ও তীব্রতার উপর। ওজন কমানো এবং CPAP থেরাপির মাধ্যমে অধিকাংশ রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
শিশুদের মধ্যেও কি স্লিপ এপনিয়া হতে পারে?
হ্যাঁ, শিশুদের মধ্যেও স্লিপ এপনিয়া হতে পারে। বড় টনসিল বা অ্যাডিনয়েড এর প্রধান কারণ। শিশুর ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা, অস্থিরতা এবং দিনে ক্লান্তি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্লিপ এপনিয়া কি বংশগত রোগ?
স্লিপ এপনিয়ার জিনগত প্রভাব রয়েছে। পরিবারে কারো এই সমস্যা থাকলে অন্যদের হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
CPAP মেশিন ছাড়া কি অন্য চিকিৎসা আছে?
হ্যাঁ, CPAP ছাড়াও ওজন কমানো, ডেন্টাল অ্যাপ্লায়েন্স, অস্ত্রোপচার এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। হালকা স্লিপ এপনিয়ার ক্ষেত্রে শুধু জীবনযাত্রার পরিবর্তনই যথেষ্ট হতে পারে।
স্লিপ এপনিয়া একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আপনার বা পরিবারের কারো মধ্যে স্লিপ এপনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা এড়ানো যায় এবং জীবনের মান উন্নত হয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলুন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
✅ বিঃদ্রঃ: এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি। নিজের শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। স্বাস্থ্য সমস্যায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।